থিয়েটারের রাজ্যেই আনন্দে থাকে অভিনেতা রাজা

বিজয়কুমার দাস 

ছোটবেলা থেকে অভিনয়ের পরিবেশেই বেড়ে উঠেছে রাজা। তবে থিয়েটার নয়, বাড়িতে বাবা এবং দাদার যোগ যাত্রা জগতের সঙ্গে। বাবা যাত্রায় অভিনয় করতেন। দাদা চিৎপুরের যাত্রার অভিনেতা। তাই অভিনয়ের ইচ্ছেটা রাজা ঘরামীর সেই ছেলেবেলা থেকেই। স্কুলে পড়ার সময় স্কুলের সোশ্যালে নাটকের মঞ্চে নেমেছিল যথারীতি। সেটা ১৯৯৭ সাল। কলেজ জীবনে অবশ্য নাটকের সঙ্গে কোনো যোগ ছিল না। এরপর চাকরী।২০১০ সালে চাকরীতে বদলীর কারণে কালীনগরে যেতে হয় রাজাকে। সেখানে দীপক নায়েকের সান্নিধ্যে এসে কালীনগর ঐকতান দলে থিয়েটারের টানেই যুক্ত হয় রাজা।

দক্ষিণ ২৪ পরগণার বাসন্তী থানার অন্তর্গত প্রত্যন্ত গ্রাম চুনাখালীতে জন্ম ( ১ ডিসেম্বর ১৯৮৪)। কিন্তু পড়াশুনোর প্রয়োজনে ১২ বছর বয়স থেকে বাড়ির বাইরে। বাসন্তী হাই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং বাঘাযতীন সম্মিলনী কলেজ থেকে শিক্ষাবিজ্ঞানে স্নাতক। তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময়েই ইরিগেশন এন্ড ওয়াটারওয়েজ বিভাগে চাকরী। তারপর থেকে চাকরী আর থিয়েটার দুটোই চলছে।

স্কুলে সুকুমার রায়ের ” ঝালাপালা ” দিয়ে নাটকের জীবন শুরু। পরে সুন্দরবন নাট্য উৎসব কমিটি প্রযোজিত, কমল চট্টোপাধ্যায় নির্দেশিত ” হঠাৎ যদি ” এবং কালীনগর ঐকতানে দীপক নায়েকের নির্দেশনায় “পুনর্জন্ম” নাটকে অভিনয় দিয়ে সিরিয়াস অভিনয় জীবনে পদার্পণ।

এরপর কালীনগর ঐকতানের সঙ্গে ক্রমশ গভীরভাবে জড়িয়ে পড়ে রাজা। দল আর্থিক স্বয়ম্ভর নয় তেমন, তাই দলের সেট, আবহ, রূপসজ্জা, আলো সব কিছুতেই হাত লাগাতে হয় সবার মতো তাকেও। শুধু অভিনেতা নয়, রাজা একজন নাট্যকর্মী মনে করে নিজেকে।
থিয়েটারের প্রথাগত শিক্ষার সুযোগ না হলেও অভিনয় করতে করতেই থিয়েটারের পাঠ নিয়েছে রাজা। এক্ষেত্রে দীপক নায়েক, সঞ্জয় গাঙ্গুলি, অয়ন জোয়ারদার, কমল চট্টোপাধ্যায়, মণীশ ভট্টাচার্য, লোপামুদ্রা গুহনিয়োগীর সাহচর্য তার অভিনয় জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে। জনসংস্কৃতির সাথে কাজ করার সূত্রে কিছু বিদেশী নির্দেশকের সঙ্গে কাজ করার সুযোগও হয়েছে রাজার। ড: সঞ্জয় গাঙ্গুলির কাছ থেকে অগোস্ত বোয়ালের ফোরাম থিয়েটার সম্পর্কে বিশেষ শিক্ষা তার অন্য প্রাপ্তি। তাই সঞ্জয়বাবুর “জনসংস্কৃতি সেন্টার ফর থিয়েটার অফ দ্য ডিপ্রেসড ” দলটিও তার প্রিয় নাট্যদল।

সামম্প্রিক কালে করোনা থিয়েটারে আঘাত হানলেও রাজা মনে করে, থিয়েটার এখন কলকাতা এবং জেলাতেও চলছে জোরকদমে। থিয়েটার তার কাছে মনের খোরাক জোগানোর মাধ্যম।
চাকরির কারণেই বাড়ির বাইরে থাকতে হলেও বাবা ( মৌলুদ ঘরামী) এবং মা ( অমিচা ঘরামী) তাকে প্রতিনিয়ত উৎসাহ জুগিয়ে চলেছে থিয়েটারের জন্য। যাত্রার অভিনেতা দাদা বাপি ঘরামী এছাড়া রাজার স্ত্রীও তাকে প্রেরণা জোগায় থিয়েটারে। তাই তো থিয়েটারটা জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে রাখতে পেরেছে রাজা।

স্কুলের নাটক ছাড়াও পুনর্জন্ম, হঠাৎ যদি, চিচিবাবার দুই সোদর, খনন, জুতো আবিষ্কার, জন্মদিন,গহ্বর, তথাপি, দ্রিঘাংচু, বিরহী বন্দুক, খেলাঘর, অন্তিগোনে, সার্চিং ফর এ গুড পার্সন, নীল রঙের মানুষ, হচ্ছেটা কী, একলব্য এবং, সে ও বিকর্ণ সহ বেশ কিছু পথনাটকও করেছে রাজা। কালীনগর ঐকতান, জনসংস্কৃতি সেন্টার ছাড়াও সোনারপুর উদ্দালক, কালিকাপুর বাংলা প্রসেনিয়াম, হাতিবাগান স্পর্শ, বনগাঁ ধুলাউড়ানিয়া, সুন্দরবন নাট্য উৎসব কমিটির সঙ্গেও থিয়েটারের সূত্রে যুক্ত থেকেছে। যখন যে দলে নাটক করেছে তখন সে দলকেই নিজের মনে করেছে রাজা। এভাবেই থিয়েটারের রাজ্যে মহানন্দে রাজত্ব করে চলেছে রাজা ।

3 thoughts on “থিয়েটারের রাজ্যেই আনন্দে থাকে অভিনেতা রাজা

  1. থিয়েটারে সাম্রাজ্য বিস্তার করুক রাজা

  2. রাজা কেবল একজন নাট্য কর্মী এমন নয়। ওর সাথে মেশার সৌভাগ্য বশত জানলাম ও অনেক গুণের সমাহার । বর্তমান সময়ের আমাদের চারপাশের পরিবেশ ও মানুষের মন মানসিকতার সঙ্গে বিস্তর ফারাক তার। জীবনের আসল স্বাদ আস্বাদন যে কিভাবে করতে হয়, তা ওর কাছ থেকে শিক্ষণীয় ।
    আমি সৌভাগ্যবান ওর মত একজন মানুষের সাময়িক সান্নিধ্য পাওয়ায় ।
    ওর সার্বিক সফলতা ও সুস্থতা প্রার্থনা করি । ধন্যবাদ ।

Comments are closed.