থিয়েটারের তীর্থপথে অক্লান্ত ঊর্ণাবতী – বিজয়কুমার দাস

নাম তার ঊর্ণাবতী। মন সঁপেছে থিয়েটারে।পার্শ্বচরিত্র নামে একটি নাটকেও ঊর্ণাবতী সেন অভিনয় করেছে প্রধান চরিত্রে। এবং একক অভিনয়। এ নাটকের নির্মাণে অনেকটা দায় ঊর্ণাবতীই সামলেছে। উত্তর ২৪ পরগণার হাবড়ার মেয়ে। হাবড়া আর বারাসাত জুড়ে আবৃত্তি, শ্রুতিনাটকে এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালিকা ঊর্ণাবতীকে সবাই এক ডাকে চেনে।

মঞ্চে নামার অভ্যাস ছোটবেলা থেকেই।পরবর্তীতেও থিয়েটারকে জড়িয়ে রেখেছে জীবনের সঙ্গে। বয়স যখন দশের নিচে তখন থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ। হাবড়ার শতদল সাংস্কৃতিক সংস্থা খুব পরিচিত প্রতিষ্ঠান। সেখানেই শ্রুতিনাটক, আবৃত্তির অনুষ্ঠানে ঊর্ণাবতী যুক্ত ছিল। উচ্চ মাধ্যমিকের পরে যোগাযোগ হাবড়া নান্দনিকের সঙ্গে। এখান থেকেই শুরু নাটকের চর্চা। এই দলের দেবব্রত দাসই ঊর্ণার নাট্যগুরু। কালসাপ, চাঁদের গায়ে, কুড়নো পাঁচালী প্রভৃতি নাটকে অভিনয় এই দলে। নান্দনিকে যোগ দিয়ে থিয়েটারকে ভালবাসতে শেখা। পরবর্তীতে অবশ্য থিয়েটার নিয়ে একটা মানসিক শক্তি অর্জন করেছে বলে তার মনে হয়েছিল। ২০১৭ – ১৮
সাল থেকে ঊর্ণা বিভিন্ন দলের বিভিন্ন নাটকে অভিনয় করে নিজের জাত চিনিয়েছে।নিজেকে কোন নির্দিষ্ট দলের বাঁধনে বেঁধে রাখেনি। আর অভিনয়ের জন্য, একটি চরিত্রকে মঞ্চে হাজির করানোর জন্য যে পরিশ্রম সে করে তার বিনিময়ে সম্মানদক্ষিণা বা পারিশ্রমিকের পক্ষপাতী সে। এ প্রসঙ্গে ঊর্ণা মনে করে, কোন নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের দাবি নয় – কিন্তু যৎসামান্য পারিশ্রমিক হলেও সেটা গ্রহণীয়। কারণ গ্রুপ থিয়েটারের লড়াই এর কথা সে জানে এবং বোঝে। পাশাপাশি হাবড়া- বারাসাতের যে কোন বাণিজ্যিক, অবাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক কিংবা ক্রীড়ানুষ্ঠানে সে সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করে। এভাবেই একই সঙ্গে অভিনয় আর সঞ্চালনার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বাড়ির মানুষজনের মধ্যে ঠাকুমা শেফালি সেন তাকে সবসময় এইসব চর্চায় সাহস জুগিয়েছেন। নানা দলে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা ঊর্ণার জীবনের ঝুলিতে।

নান্দনিক ছাড়াও থিয়েটার প্লাটফর্ম, অশোকনগর প্রতিবিম্ব, অশোকনগর ভুঁইফোড়, মধ্যমগ্রাম জার্ণি থিয়েটার, গোবরডাঙা উদীচি, কলকাতা স্বতন্ত্র, জনসংস্কৃতি থিয়েটার অফ দ্য অপ্রেস্ট প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য নাট্যদলের উল্লেখযোগ্য নাটকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা তার।থিয়েটার প্লাটফর্মে দেবাশিস রায়কে পরিচালক হিসাবে পেয়ে অনেক কিছু শিখেছে। দেবাশিস রায়ের থিয়েটার নির্মাণের কাজ তার অভিনয় জীবনে সহায়ক হয়েছে বলে জানিয়েছে ঊর্ণাবতী।

অশোকনগর ভুঁইফোড় দলে পরিচালক হিসাবে পেয়েছে পার্থসারথি সেনগুপ্তকে। তাঁর নির্দেশনায় চোর এবং পিউপা নামে দুটি নাটকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছে।মুকুন্দ চক্রবর্তীকে ঊর্ণা পেয়েছে নির্দেশক ও সহ অভিনেতা হিসাবে। আবার টাকি আমরা অমলকান্তি দলে ছোটদের নিয়ে ” সোনালী হৃদয়” নামে একটি প্রযোজনায় হাত দিয়ে মুকুন্দ চক্রবর্তীকে পেয়েছে সহ নির্দেশক হিসাবে।

কলকাতা স্বতন্ত্র দলের প্রযোজনা ” পাখির বাসা” নাটকটি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রশংসিত হয়েছে। এ নাটকেও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আছে ঊর্ণাবতী। স্বতন্ত্র প্রযোজনায় শ্যামল চক্রবর্তীর পরিচালনায়” গেটম্যান” নাটকেও ঊর্ণা অভিনয় করে। কলকাতা সন্দর্ভর বহু প্রশংসিত প্রযোজনা “তিন তস্কর” নাটকে ঊর্ণা অভিনয় করেছে কমল চ্যাটার্জীর মত অভিনেতার সঙ্গে।রাজ্যের বিভিন্ন মঞ্চে অভিনীত ও প্রশংসিত থিয়েটার ফোরাম প্রযোজিত ” পার্শ্বচরিত্র” নাটকে সে শুধু প্রধান চরিত্রই নয়, একক চরিত্রও। নির্দেশনার দায়িত্বও পালন করেছে এই নাটকে। সেইসব বসন্তকাল, ইলা গুঢ়ৈষা, চোর, পিউপা, স্বগতোক্তি, অমল আলোয়, পাখির বাসা, গেটম্যান, তিন তস্কর, পার্শ্বচরিত্র প্রভৃতি নাটকের সফল অভিনেত্রী মধ্যমগ্রাম বাদুর জনসংস্কৃতি থিয়েটার অফ দ্য অপ্রেস্ট দলের হয়ে “সোনার মেয়ে” না, গাঁয়ের মেয়ে, ভালোমানুষ নাটকেও অভিনয় করেছে।

নয়া রূপকথা নামে একটি দল গঠন করে দীর্ঘদিন ছোটদের নিয়ে নাটক, নৃত্যনাট্য, বাচিক প্রশিক্ষণ, খেলার ছলে নাটক নিয়ে কাজে যুক্ত রেখেছে নিজেকে। তীর্থঙ্কর চন্দর ” রমারুমি” অবলম্বনে ” স্তর” নাটক প্রযোজনা করে চমকে দিয়েছিল অনেককেই। এভাবেই থিয়েটারের তীর্থপথে চলেছে ঊর্ণাবতী। ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়ে ইংরেজি সাহিত্যের স্নাতকোত্তর এবং জার্ণালিজমের সফল ছাত্রী ঊর্ণাবতী চলতে চায় আরো দীর্ঘ পথ।

One thought on “থিয়েটারের তীর্থপথে অক্লান্ত ঊর্ণাবতী – বিজয়কুমার দাস

  1. Excellent and necessary mention for an young talented theatre worker. Hope such encouragement will bring more achievements.

Comments are closed.