ফার্স্ট বেল
“স্বপ্ন দেখি ঐক্যবদ্ধ প্রগতিশীল নাট্য আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ব বলে।প্রগতিশীল নাট্য আন্দোলন গড়ে না উঠলে প্রগতিশীল আন্দোলনও দানা বাঁধবে না।”(বিজন ভট্টাচার্য। কালান্তর)।বাক্য কটি যাঁর তাঁর জন্মের শতবর্ষ (১৯১৫-২০১৫) বছর পাঁচেক আগে আমরা পেরিয়ে এসেছি।সেই অর্থে বিজন ভট্টাচার্য একটি মনস্ক সময়ের ভাষ্যকার।বছর দুই আগেও (১৯৪৩-২০১৮) গণনাট্য পর্যয়ের একটি ক্রান্তিকাল আমরা অতিক্রম করে এসেছি।বিজ্ঞানী আইন্সটাইনের space,timeও object-র যে গুণগত নির্দেশফ্রেম তাতে ব্যক্তি,সময় ছুঁয়েই তাঁর একমাত্রিক অভিপ্রায়কে কোনো সময়েই বিস্তৃত প্রেক্ষিত বর্জিত কোনো সত্তায় স্থায়ী করতে পারেন না। তাই বিজনের সময় স্বীকৃত ফ্রেমের বাইরে অন্য একপ্রকার ঐক্যবদ্ধ সৃজন আমরা লক্ষ্য করি।যেখানে বৃহত্তর মানব সমাজ,এককথায় এই দীর্ণ রক্তাক্ত অন্তজমিনে জীবন প্রযোজিত হাহাকার তাঁকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে।গণনাট্য, নবনাট্য অথবা অন্যপ্রকার আঙ্গিকে মানুষ যেখানে আদি ও অকৃত্রিম উপাদান সেখানে নিজস্ব আত্মতৃপ্তির সৃজন কতখানি কালজয়ী হতে পারে তা নিয়ে বিস্তর কথা চালাচালি সমানে আজও জায়মান। কিন্তু পরিসর যদি আমার কথা বলার অধিকারকে স্বীকৃতি দেয় তাহলে যে কোনও পরিশ্রম লাঘব হওয়ার একটা স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকা যায়।আর সেই কথা বলার স্পষ্ট প্রসেনিয়াম ব্যক্তিকে সমষ্টির করতলে সমর্পণ করতে সাহস পায়।এখানে নাট্য আন্দোলন অথবা অন্য কোনো প্রকার আন্দোলনের যে ধরতাই থাক না কেন,তাতে একটা জীবন ছোঁয়া ব্যাপার থাকাই স্বাভাবিক। একে বাহুল্য বলে অনেকের আত্মপ্রসাদ পরিযায়ী আনন্দে তৃপ্ত হতে পারে অবশ্যই,কিন্তু আমার চারিদিকে ঘটে যাওয়া অজস্র ঘটনাপঞ্জীর সম্মিলন যার একটির সঙ্গে অন্যটির কোনও সাদৃশ্য নেই অথবা উপাদান গত ভাবে তার মধ্যে একটি সুক্ষ্ম সম্পর্ক বিদ্যমান থাকলেও তাকে একটি নির্দিষ্ট ফরমায় ফেলা যায় না।সেখানে ব্যক্তি মানুষ,সমাজ সম্পর্কে বলতে চাইলেও তাঁকে তাঁর সীমা বদ্ধতা নিয়ে পাঁচবার ভাবতেই হয়।তাই এখনও বিজন ভট্টাচার্যের নাট্য আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার‘স্বপ্ন’আজও অধরা থেকে গেছে শুধুমাত্র সেই কারণেই যে,নাট্যশাস্ত্রে-র দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে তা আজও সর্বজনের হয়ে উঠতে পারেনি।সমষ্টির ভাবনা প্রযোজনার অর্থমূল্যে বিকিয়ে দিয়েছে নিজেকে।সত্ত্বেও,এখনও সত্য সেই চল্লিশের কাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সারা দেশেই অসংখ্য নাট্যদল তৈরি হয়েছে,হচ্ছে আবার তাদের অনেকেরই ক্ষয়িষ্ঞু অন্তঃসার থেকে অন্যদলের সৃষ্টি হয়ে শৃঙ্খল বিক্রিয়ায়(chain reaction) সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটেছে।তবু,তার পদ্মমুখ নাড়িতে দায় সচেতন অভীক্ষা করতল স্পর্শ করতে পারেনি। প্রগতিশীলতা একটি শৌখিন আত্মচর্চায় মগ্ন থেকে সংখ্যা বাড়িয়েছে,কিন্তু গুণগত ঐতিহ্যে মানুষের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারেনি।
স্বাধীনতার আগে যুক্ত বাংলার স্বাদ তার অভীপ্সা ও অস্মিতা এবং পরে দেশভাগের বিচ্ছিন্নতা কাঁটাতারে-র বেদনাবোধ, দুই ভিন্ন স্বদেশের নস্ট্যালজিয়া সৃষ্টি করলেও তাদের যৌথ আবেগ,যন্ত্রণা, ভাগ করে নেওয়া চাওয়া পাওয়া,দুঃখবোধ তাদের জন্ম-মৃত্যুর ভিতর একটি সুররিয়ালিস্ট অভিব্যক্তি স্পষ্ট তারানায় বেঁধেছে। আক্ষেপের বিষয় সেই উত্তরাধিকার থাকা সত্ত্বেও বর্তমান সময়ের এত কাটাছেঁড়া,সমাজ বিযুক্ত ধর্ষক (!) ব্যবস্থার মাঝে দাঁড়িয়েও আমাদের নাট্যচর্চার মধ্যে তার প্রতিফলন কতোটা পড়ছে তা ভেবে দেখার।পরপর দুটি মহাযুদ্ধ, ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গা,স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা, মন্বন্তর, জাতীয় নেতাদের নেতৃত্বের দেউলিয়াপনা সমাজের সর্ব স্তরের ক্ষয়িষ্ঞু মূল্যবোধ আলোড়িত করেছিল সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে। বিজন ভট্টাচার্য যখন বলেন, “দুঃখের বিষয় নাটক পরিবেশন করতে গিয়ে শত বাধা বিপত্তির মধ্যে বিয়াল্লিশের কালেও যে উন্মুুক্ত প্রাণের পরিসর পেতাম,বর্তমান অবস্থায় অবাধ সুযোগ সুবিধার মধ্যে (!) আজ এই উৎসব অঙ্গনের সন্ধান পাই না। আমিই অঙ্গন চিনি না,না অঙ্গনই আমাকে চেনে না,কে জানে।”এক দায়বদ্ধতার প্রতি তাঁর উন্মুখ ক্রন্দন ঝরে পড়েছে। কিন্তু যে আত্মমর্যাদা ও আত্মপীড়ন থেকে বাদল সরকার তাঁর‘থার্ড থিয়েটার’কে সরাসরি দর্শক ও নাট্য অভিনেতার সংযোগের সেতু হিসাবে ব্যবহার করতে চাইলেন,সেখানে অনেক প্রশ্ন রেখেও বলা যায় বৃহত্তর মানবগোষ্ঠীর একটি সামান্য যদি ঐ নাটকের দর্শক হন, তাহলেও উদ্দেশ্যপূরণের দিক দিয়ে প্রসেনিয়াম থিয়েটারকে একটি প্রশ্ন চিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় তৃতীয় থিয়েটার।‘প্রাণের পরিসর’ বলতে বিশুদ্ধবাদীদের যদি একতরফা একটি ব্যক্তি উন্মোচন হয়, সেখানে নাট্যপ্রযোজনার খাতিরে এক মঞ্চ সফল অভিনেতাকে একাধিক দল যখন বারবার কাজে লাগায় তখন সেখানে হলপূরন ও অর্থপূর্তি’র তাগিদ এসে পড়ে দলগুলির ওপর।বাজারের সঙ্গে শিল্প মাধ্যমের অর্থনীতি-র চটুল আত্মীয়তা তখন প্রশ্রয় পায়। ঐ বিশিষ্ট অভিনেতা বা অভিনেত্রীর দৌলতে কিছু নির্দিষ্ট নাট্যদল ‘বাজার বাজার’খেলায় মেতে ওঠে।সেখানে গল্পবলার আতিশয্যে, কোরিওগ্রাফির চটুল উন্মত্ততায় টিকিট বিক্রির দিকেই মন চলে যায় দলের।মঞ্চ নাটকের একজন সাধারণ দর্শক হিসাবে বহুবার দর্শক হিসাবে দর্শক আসনে বসার অভিজ্ঞতায় হল থেকে বেরনোর পর মনে হয়েছে,‘এ যজ্ঞ যজ্ঞই নয়’।মধ্যবিত্ত বিলাসিতার চর্বিত চর্বন সাধারণের বাইরে এক অসাধারণ শৌখিনতা-র জন্ম দিচ্ছে।এতদ্ সত্ত্বেও শিল্পের দায় নিয়ে আমাদের মধ্যবিত্ত টেবিল ফাঁকা থাকবে না,একথা হলফ করে বলতে পারি।
সেকেন্ড বেল
কবি প্রাবন্ধিক ও নাট্যকার মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘুম’ নাটকের একটি অংশে গিয়ে স্তব্ধ হয়ে যেতে হয় নাটকের ইজেলে।নাটকে বললেও আসলে তাঁর নিজস্ব অনুভব,তাঁকে তাড়িয়ে নিয়ে গেছে সৃষ্টিতত্ত্বের অনুসুরে। “যতদিন রাজনীতি না ‘পিওর’হবে কিছুতেই পৃথিবী শোধরাবে না।কোনও ‘ইজম্’ এর তত্ত্ব দেশকে মঙ্গলের দিকে নিয়ে যেতে পারবে না।যদি সবকিছু আমি ‘পিওর’ চাই আর তা না পেলে আমি তেতে উঠি।গালমন্দ করি। তাহলে নিজেকে কেন ‘পিওর’করে গড়ে তুলব না।…তুমি নিজে খাঁটি না হলে খাঁটি কিছু চাইতে পারো না।তোমার সে অধিকার নেই।তুমি অন্যের থেকে খাঁটি আচরণ চাইবে আর নিজে কেমন তা তাকিয়ে দেখবে না এমন হতে দেওয়া যায় না।” নাটকে বিশুদ্ধবাদীদের সঙ্গে সংস্কারবাদীদের দ্বন্দ্ব সৃজনশীল কর্ম প্রণেতাদের মধ্যে আজন্মকাল বাড় বাড়ন্ত থেকেছে সন্দেহ নেই।কিন্তু বিশুদ্ধ তত্ত্বের উদ্ভাবনা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার দায় শুধুমাত্র ব্যক্তির উপর নির্ভর করে না।তার পারিপার্শ্বিকতাকে লগ্ন সঞ্জাত থাকে।সমাজ নির্ভর শিল্পের একটা দায়িত্ব মেনে নিতে কোনও অসুবিধে নেই যে,তা বিতর্ক মুক্ত নয় কখনোই। সমাজ একজন নাট্যকর্মীকে বিশ্বাস করতে শুরু করে তাঁর অভিজ্ঞতার চর্চা ও অভিনিবেশ থেকে।তখনই থিয়েটারে সৎ মানুষের তাগিদ আমরা অনুভব করি। সৎ আর অসৎ-র যে তুল্যমূল্য বিচার সমাজ করে থাকে ঠিক সেরকমটি নয়।নিজের নিজের শিল্পের প্রতি সৎ থাকার মধ্য দিয়ে একজন আত্মশুদ্ধ,পরিশীলিত ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্বের উদ্বোধন সম্ভবপর হতে থাকে। সেটা হতে পারে জীবনভর একটি চর্চার মধ্য দিয়ে।নাটক, নাট্যকার,অভিনেতা ও প্রযোজক এই চতুর্বৃত্তের বাইরে যাঁর অবস্থান তিনি একজন নাট্যদর্শক। নাটক অভিনয়ের সময় একজন অভিনেতা যে স্পেসটুকু পান ৮/১৬ বা ৮/১৪ অথবা অন্য জ্যামিতিক প্রসেনিয়াম তা তাঁর নাটক দেখতে আসা দর্শকের তুলনায় অনেক কম। আইনস্টাইনের যে ‘স্পেস’-র কথা দিয়ে শুরু করেছি- লাম সেখানেই ফিরে গিয়ে আবার স্পর্শ করতে হয় সময়’কে। অভিনেতার স্পেস অবশ্যই সময়’কে দাবার বড়ে করে আগাবে।কারণ তিনি জানেন আসলে তিনি ব্যক্তি অভিনেতা তাঁর অভিনয়ের মধ্য দিয়ে যা বলতে চান তা যদি তাঁর চরিত্রের কাছে সৎ না হয় তাহলে সময় কে তিনি অগ্রাহ্য করছেন এবং নাটকের দর্শককে তিনি ঠকাচ্ছেন।এই ঠকানোর মধ্যে শিল্পের কাছে তঞ্চকতা প্রকট হয়ে উঠছে।আজকের কলকাতার থিয়েটারে টিকিট বিক্রির দৌলতে যখন দর্শকের রুচি-অরুচি অথবা ভালো মন্দের ওপর একটি প্রাতিষ্ঠানিক সিল মোহর পড়ে যায় তখন নাটক শুরুর ঘোষনায় এত লক্ষ টাকার টিকিট বিক্রির বিজ্ঞাপনী দাম্ভিকতার পরেও নাটক হাফ দেখার পর দর্শক উঠে যাচ্ছেন নজরে এসেছে। এখন থিয়েটার বাঁচিয়ে রাখার কৌশল হিসাবে যেমন সারা বছর জুড়েই নাট্যমেলা বা বর্ষ উদযাপনের রেওয়াজ স্বাভাবিকতা পেয়েছে, তেমনই সমস্ত নাটকই যে প্রযোজনার নিপুন দার্ঢ্যে মনকে ছুঁয়ে যাচ্ছে একথা নাটকের শিল্পীরাও মানেন না। গ্রাম বাংলার অথবা আধা শহরের অনেক নাট্যদলই যারা কলকাতার থিয়েটার দেখে বড় হয়নি,সেই সব দলের অনেক প্রযোজনা দেখলে মানতেই হয় যে,পেশাদার মঞ্চের বাইরে গিয়ে অনেক অসাধারণ কাজ মুখ বুজে তাঁরা নামিয়ে যাচ্ছেন সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার তোয়াক্কা না করে।সারাদিনের কায়িক শ্রম সেরে শো দেখে ফেরার সময় নাটকের দর্শক নিজেদের মধ্যে নাটক নিয়ে আলোচনা করছেন দেখেছি। এখানে বলা যায়, পেশাদারিত্ব যেমন একটি বৈশিষ্ট্য, তেমনই অপেশাদারিত্বও একটি তন্নিষ্ঠ পরিচর্যা।
থার্ড বেল
থিয়েটার একটি সংগঠন। যৌথ ব্যবস্থা ও প্রচেষ্টার অন্তীয় পরিশীলন একটি সর্বাঙ্গীন অনুভবে প্রাণিত হয়। সংগঠন হলেও তা এখনও কমিউন হয়ে উঠতে পারেনি। পেশাদারিত্বের দায়ভাগ সর্বাংশে থিয়েটার কর্মীদের ‘হোলটাইমার’হওয়ার পথে বাধা।অথচ থিয়েটারে হোল টাইমার-র অভাব বেশিরভাগ সময়ে সময়ের অভাবকেই প্রকট করে।দশটা-পাঁচটার নিয়মিত কার্যকারণের দৌলতে অফিস চর্চা এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ রোল প্লে করে।দৈনন্দিন ‘করে খাওয়ার’চাপ,দিনগত রুটিনের সংসার যাপন, ছেলে মেয়ে বৌ সামলে একটি প্রতিষ্ঠানের হয়ে গলা ফাটানোর সময় বেশিরভাগ থিয়েটার কর্মীদের কাছেই দুর্লভ হয়ে দাঁড়ায়।বিদেশের থিয়েটারে চব্বিশ ঘন্টার নাট্যকর্মীদের অভাব খুব প্রকট নয়।সেখানে একজন থিয়েটারের অভিনেতা তিনি যেমন শুধু অভিনয়ের মধ্যেই নিজেকে প্রকৃষ্ট রাখছেন তাই না।সঙ্গে সঙ্গে থিয়েটার সংগঠনও বুঝছেন, করছেন আবার নাটকের জন্যে,নাট্যমঞ্চের জন্য রাষ্ট্রের কাছে দাবি দাওয়া নিয়ে গলা তুলছেন।থিয়েটার যদি সার্বিক একটি সংগঠন হয়ে ওঠে তাহলে তার কপালে ‘মধ্যবিত্তের বিলাসিতা’এই শব্দবন্ধ জুটবে কেন!আবার রাষ্ট্রের আধিপত্যের কাছে অনেক নাট্যদলই মাথা বিকিয়ে দিয়ে সংগঠনকে গুলি মেরে অর্থদাক্ষিণ্যে দিব্বি পরিপুষ্ট হয়ে উঠছে। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। টিকে থাকা ও টিকিয়ে রাখার মধ্যে যে বিতর্ক বিদ্যমান সেখানে ব্যক্তি সম্পর্ক প্রাধান্য পেলে সংগঠন অনেক পিছিয়ে যায়।তাতে সাময়িক একটা লাভ হয় বটে সুদূরপ্রসারী ভাবনায় তা ক্ষতিই করে।এটা একপ্রকার ক্ষয় এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি অবজ্ঞা। শৃঙ্খলাহানিও বটে। থিয়েটার প্রযোজনায় এখন স্পর্ধা অনেক কমেছে।দৃষ্টিভঙ্গীটা এমনই যে, যদি রাষ্ট্র বিরাগভাজন হয় তাহলে অনুদানের অংকে কৌলীন্য ব্রাত্য হয়। বেশিরভাগ নাটকই এখন পুরাণ আশ্রিত।অথবা ইতিহাসাশ্রিত। আবার কোথাও এতই শৌখিন সে প্রযোজনা যে হল থেকে বেরিয়েই বলতে হয়,এ নাটক কী না নামালেই হত না! এমন নাট্যদল তো অবশ্যই আছে যাঁরা সমাজের মৌলিক সমস্যাগুলি নিয়ে অভিনেতাদের মুখ দিয়ে প্রশ্ন তোলেন।মঞ্চে সময়ের দাবিকে তাঁরা শৌখিন চর্চার কাছে বিকিয়ে দেন না।নাটক সমাজ বদলের হাতিয়ার কিনা তাতে বর্তমান শতকে দাঁড়িয়ে আমার মধ্যে একটি অসূয়া কাজ করে।আবার ‘হাতিয়ার’শব্দকে অনেকে পার্টির আমদানি করা শব্দ বলে চশমার ওপর দিয়ে দেখেন! কিন্তু অনেক মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়িত না হওয়ার পিছনে যে আত্মধিক্কার।সেই আত্মগ্লানি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যে ‘মুক্তধারা’র সহস্র বেগে ‘অচলায়তন’ ধসিয়ে দেওয়ার আত্মচর্চা ও সেই অভিমুখে পরিশ্রম জরুরী বলে মনে হয়েছে।আর সেই সঙ্গে আমি নাট্যকর্মী অথবা পারফর্মার হয়ে বেঁচে থাকব, না বিশুদ্ধবাদীদের শিল্পের জন্য শিল্পের দলে নাম লেখাব অথবা আধিপত্য- বাদের বিরুদ্ধে গলা তুলব,সেই সাংগঠনিক পাঠচক্রের একটি নান্দীমুখ নাট্যদলগুলিতে হওয়া দরকার। শেষের শুরুটা কারও করা দরকার।